এসেছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারক। শুরু হলো ইবাদতের ভরা মৌসুম। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে মাবুদের সান্নিধ্য ও সন্তোষ অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ এটি।
নবীজি তার সাহাবিদের রমজানের সুসংবাদ শোনাতেন। রমজানের ফজিলতের কথা বলতেন। ইবাদত ও সাধনায় মনোযোগী হওয়ার উপদেশ দিতেন। অধিক পরিমাণে নেকি অর্জনে উৎসাহ জোগাতেন।
নবীজি (সা.) বলতেন, ‘তোমাদের দুয়ারে রমজান এসেছে। এটি একটি পবিত্র মাস। মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর এ মাসে সিয়াম সাধনা ফরজ করেছেন। এ মাসে খুলে দেওয়া হয়েছে জান্নাতের সব দুয়ার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহান্নামের সব দ্বার। শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়েছে শিকলে। এ মাসে একটি রজনি রয়েছে, যা অন্য হাজার মাসের থেকেও উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে যেন (জীবনের) সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো।’
আচ্ছা! কেমন ছিলো আমাদের প্রিয় নবীজির রমজান? কীভাবে কেটেছিলো তার দিনরাত? আজ আমরা জানবো প্রিয় নবীজির সেহরি কেমন ছিল।
সাদাসিধে ও সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবীজি। জীবনে সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর। সীমাহীন প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন। খাবারের ব্যাপারেও ছিলো এ সারল্যের ছাপ।
নবীজির খাবার গ্রহণের এ সারল্য ও অল্পতুষ্টি বজায় থাকতো রমজানের সেহরির সময়ও। তিনি সাধারণ খাবার দিয়ে সেহরি করতেন। ঘরে যখন যা থাকতো তাই সেহরি হিসেবে গ্রহণ করতেন।
সেহরির খাবার হিসেবে তার বিশেষ কোনো পছন্দের কথা জানা যায় না। তবে হ্যাঁ, তিনি অন্য সব সময়ের মতো সেহরিতেও খেজুর পছন্দ করতেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘উত্তম সেহরি খেজুর এবং উত্তম তরকারি সিরকা। আল্লাহতায়ালা সেহরি গ্রহণকারীদের প্রতি দয়া করুন। ’(কানজুল উম্মাল: ২৩৯৮৩)
সেহরির খাবার যাই হোক না কেন, নবী কারীম (সা.) নিয়মিত সেহরি গ্রহণ করতেন এবং সাহাবীদেরও সেহরি গ্রহণের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা সেহরি গ্রহণ করো,কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। (বোখারি: ১৯২৩, মুসলিম ১০৯৫)
নামাজ, সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি
রাসুলের (সা.) সেহরি ছিল খুব সাদামাটা। সেহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর খেতে পছন্দ করতেন।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের সেহরিতে বরকত দিন। (এরপর বলেন) তোমরা সেহরি গ্রহণ কর এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও, একটি খেজুর দিয়ে হলেও, আঙুরের কিছু দানা দিয়ে হলেও। নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তোমাদের জন্য শান্তির দোয়া করবে। (জামে সুয়ুতি : ৫০৭০)
নবী কারীম (সা.) সেহরি খেতেন রাতের শেষ ভাগে সুবহে সাদিকের আগ মুহূর্তে।
হজরত যায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুলের (সা.) সঙ্গে সেহরি খেতাম, এরপর তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ফজরের আজান ও সেহরির মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিলো? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমাণ। (বুখারি, হাদিস : ১৯২১)