২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৩৫:১০ অপরাহ্ন
রাজশাহী সিটিতে নিরব প্রচারণায় প্রার্থীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
রাজশাহী সিটিতে নিরব প্রচারণায় প্রার্থীরা

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। সে হিসেবে নির্বাচনের বাকি দুই মাসেরও কম। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরেই প্রস্তুতি শুরু করেছে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে থেকে নিরব প্রচারণায় নেমেছেন তারা। সভা, সমাবেশ, মতবিনিময় ও ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ব্যানার সাটোনো, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঈদ পূনমিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। নিরব এই প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এবার মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আধুনিক রাজশাহীর রুপকার হিসেবে পরিচিত খায়রুজ্জামান লিটনের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী এখন পর্যন্ত সামনে আসে নি। দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও ঈদ পুর্নমিলনী করে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতেও মাঠে নেমেছেন লিটন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজ অডিটেরিয়ামে নগরের ১ থেকে ১২ নং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ পুনমিলনী করেন তিনি। সেখানে নির্বাচনের প্রচারণায় নামার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়াও সিটি নির্বাচন কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু।

এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও খায়রুজ্জামান লিটনের বাইরে কিছু ভাবছে না। তারাও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। আর বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না আসার ঘোষণায় এখন পর্যন্ত অনড় বিএনপি নেতারা। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মেয়র পদে প্রকাশ্যে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। যদিও জাতীয় পার্টির নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এসে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তার ভোটের কোন কার্যক্রম এখনো চোখে পড়েনি।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রর্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে আনারস প্রতীকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বুলবুল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে রাজশাহী সিটির মেয়র হন।

এদিকে, এবার রাজশাহী জুড়ে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় নগরবাসী আবারও এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে মেয়র নির্বাচিত করবেন বলে আশাবাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র খায়রুজ্জামান লিটনের কোন বিকল্প নেই। নগরবাসীও এ বিষয়ে একমত। জনপ্রত্যাশার কথা চিন্তা করেই দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। সকল নেতাকর্মী বিভেদ ভুলে তার পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। আশা করছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় লিটন আবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন।’

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগরের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘দল থেকে আমি মনোনয়ন পেয়েছি। নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় নামবো।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশষ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচন নিয়ে এখন ভাবছি না। এই সরকারের অধিনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিব না। আগামী সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধিনে হওয়ার ঘোষণা আসার পরেই আমরা অন্য নির্বাচন নিয়ে ভাববো। আমি বা আমাদের সংগঠনের কোনো প্রার্থীও রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। কেউ মাঠেও নামেনি।’

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি জয়ী হওয়ার পরে রাজশাহী নাগরীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে উন্নয়নের মাধ্যমে। এখনো তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। রাজশাহীর উন্নয়নে আরও চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রনয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। আবারও নির্বাচিত ওই প্রকল্পের বরাদ্দও নিয়ে আনবো ইনশাল্লাহ। সেটি হলে রাজশাহী নগরী আরো নতুন রূপে রূপ লাভ করবে। আশি আশা করছি সে সুযোগ রাজশাহীবাসী আমাকে দেবেন।

রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহীতে এবার ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ১৫৭ জন ভোটার ভোট দিবেন। এরমধ্যে নতুন ভোটার ৩০ হাজার ১৫৭ জন। গত বছর ভোটার সংখ্যা ছিলো ৩ লাখ ২২ হাজার। এবার পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৭১ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৭২ জন।

এবার ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের ১১৭৩ টি রুমে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। সম্ভাব্য ২১ মে নমিনেশন দেয়া শুরু হবে। ২৩ মে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়। এছাড়া ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এরপর প্রকাশ্যে উৎসব মূখর প্রচারণায় নামবেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।

রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসার আবুল হোসেন জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এই নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা আন্তরিক। তবে কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের ব্যাপার। তারা নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করবেন। আর নমিনেশন সংগ্রহ, দাখিল, প্রতীক বরাদ্দের সম্ভাব্য কিছু তারিখ তারা ঠিক করেছেন।

শেয়ার করুন