যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব স্বল্প আয়ের দেশগুলোর নীতি-পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলা, সামষ্টিক-আর্থিক স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই বিশ্ব অর্থনীতিতে যুদ্ধের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে স্পেনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অর্থনীতি ও ডিজিটালাইজেশনমন্ত্রী নাদিয়া কেলভিনো এ ঐক্যবদ্ধের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় অনেক দেশ কোভিড-১৯ মহামারি এবং অথনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার পরও পুনরায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়ছে। এটি শেষ পর্যন্ত টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
মরক্কোতে শনিবার বেলা ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা) শেষ হয় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র বৈঠক। ওই অনুষ্ঠানে আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার উপস্থিতিতে সভাপতি বক্তব্য দেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ বৈঠকটি শুরু হয় ৯ অক্টোবর। এতে আগামী শীতকালীন বৈঠক ২০২৪ সালের এপ্রিলে হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হওয়ার কথা রয়েছে।
সমাপনী বক্তব্যে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্বল্প আয়ের দেশসহ সবাইকে চারটি খাতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে টেকসইভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে মূল্য স্থিতিশীলতা অর্জনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত বর্তমানে এই চারটি সূচকে বাংলাদেশও নেতিবাচক অবস্থানে আছে। ফলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যে চারটি খাতে নজর দিতে বলেছে সেটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অনেক আগে থেকে এ দেশের অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন।
বৈঠকে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে সার ও খাদ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উচ্চ ঋণের প্রবণতার দিকে যাচ্ছে দেশগুলো। এ ছাড়া আর্থিক অবস্থার কঠোরতা, তীব্র জলবায়ুর ধাক্কা, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, উদ্বাস্তু, বাস্তুচ্যুত মানুষ ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় কারণে এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে। এটি দুর্বল দেশ ও জনগণকে বেশি প্রভাবিত করছে। এতে উদ্বেগও বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন থেকে খাদ্যপণ্য ও সারের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বিষয়ে নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হয়। এটি করতে পারলে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর চাহিদা পূরণ করবে। বৈঠকে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। অনেক দেশে মহামারির আগে যে প্রবৃদ্ধি ছিল সেখান থেকেও অনেক নিচে বিরাজ করছে।
বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে ডলারের মূল্য টালমাটাল অবস্থায় আছে। বৈঠকে সেটি তুলে ধরে বলা হয় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময় হার ও বৈশ্বিক ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় সব ধরনের কাজ করতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আইএমএফ বিশ্বব্যাপী আর্থিক নিরাপত্তার জালকে শক্তিশালী এবং ঋণের দুর্বলতা মোকাবিলায় কাজ করবে।