রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলামকে (৭০) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত শনিবার বিকালে নগরীর বাসার রোডের সাধুরমোড় এলাকার একটি রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকর্মী অধ্যাপক সফিকুলকে আটক করেন। সেখানে তাকে মারধর করা হয়।
রোববার পুলিশ গত ৯ সেপ্টেম্বর বাগমারা থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করেন। কোনো জামিনের আবেদন না থাকায় আদালত অধ্যাপক সফিককে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
সন্ধ্যার আগে আরএমপির বোয়ালিয়া থানা পুলিশ অধ্যাপক সফিকুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। অধ্যাপক পিএম সফিকুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা গ্রামে। তবে তিনি নগরীর কালুমিস্ত্রির মোড় এলাকায় বসবাস করেন।
এদিকে অধ্যাপক সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর এলাকা ও তার নিজ উপজেলা বাগমারা থানায় কোনো মামলা ছিল না।
রাজশাহীর বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মনসুর রহমান আহত হন। সুস্থ হয়ে তিনি গত ৯ অক্টোবর বাগমারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্তে পিএম সফিকুল ইসলামের নাম এসেছে। এ কারণে তাকে গ্রেফতার দেখাতে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে রাবির বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন এলাকায়। নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন কালুমিস্ত্রির মোড় এলাকায় নিজ বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। শনিবার বিকেলে অধ্যাপক পিএম সফিক বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে হাঁটছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মী তাকে চিনতে পেরে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তাকে মারধর করে আটকে রাখা হয় একটি মাঠের মধ্যে। খবর পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে রোববার আদালত থেকে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় অধ্যাপক সফিকুল ইসলাম তার আইনজীবীকে বলেছেন, তিনি যে এলাকায় বসবাস করেন সেই এলাকার এক বিএনপি নেতা সাত লাখ টাকা দাবি করেছিলেন; কিন্তু তিনি রাজি হননি। ফলে তার ওপর হামলা হতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ওই নেতার অনুসারী কিছু নেতাকর্মী আমাকে নাজেহাল করেন। তাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যাপক পিএম সফিকুল ইসলাম সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। অবসরের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে সহ-সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সর্বশেষ তিনি নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারির নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। রাবির আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীলপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল প্যানেলের সক্রিয় শিক্ষক নেতা ছিলেন। রাবির বাংলা বিভাগে যোগদানের আগে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও কলা অনুষদেরও নির্বাচিত ডিন ছিলেন পিএম সফিকুল ইসলাম।