১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:০৫:০৭ অপরাহ্ন
হাসিনা সরকারের আর্থিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৮-২০২৪
হাসিনা সরকারের আর্থিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে

শেখ হাসিনা সরকারের নানামুখী অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণসহ অর্থনীতির বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে অন্তর্র্বতী সরকার। এটি প্রণয়নে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি প্রধান প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য মনোনীত করতে পারবেন। কমিটির সদস্যরা অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিকল্পনা কমিশনের কোনো ভবনে তাদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করবেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে। সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর/সংস্থা কমিটিকে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।


জানা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে গত দেড় দশকে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত হয়েছে। বিগত শেখ হাসিনার সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণগ্রহণে দেশের অর্থনীতি নাজুক হয়েছে।


অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল তা দেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায় না বাড়িয়ে দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল বিগত সরকার। তা ছাড়া অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থপাচারের অবাধ সুযোগ,


বাজার সিন্ডিকেটের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। জুলাই মাস শেষে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বলা যায়, বিগত সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্র্বতী সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। দেশের অর্থনীতি সুসংহত করতে অন্তর্র্বতী সরকার ৬টি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি পুনরায় সচলের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যা নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দূরীকরণ, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর ও শুল্কনীতির সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো।


অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শুরুতে প্রকাশ করা দরকার। এ লক্ষ্যে ‘প্রিপারেশন অব এ হোয়াইট পেপার অন দ্য স্টেট অব দি ইকোনমি’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে সরকার। ধারণাপত্রে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্যচিত্র সমৃদ্ধ একটি শে^তপত্র প্রস্তুতের ধারণা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- প্রস্তাবিত শে^তপত্রটি দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি হতে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে। শে^তপত্রে ৬টি বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। এর মধ্যে পাবলিক ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ঘাটতি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান।


ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি, দেশের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল হবে। যা, ভবিৎষতের জন্য অনুসরণযোগ্য। আমি শিগগিরিই উপযুক্ত ও যোগ্য লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করবো।’


শেয়ার করুন