রাজশাহী মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকি ও মোট অংকের চাঁদা আদায় করে জীবন-যাপন করাই তাদের পেশা। অবশেষে গত রবিবার (২৪ জুলাই) রাতে নগরীর বোয়ালিয়া থানার মধুরডাঙ্গা ও চন্দ্রিমা থানার আসাম কলোনী বৌ-বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপরাধ ও প্রতারক চক্রের নারীসহ ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকচক্রের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্য হতে নগদ আড়াই হাজার টাকা, ১ টি চাকু ও ছিনিয়ে নেয়া ১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আজ সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. রফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. সিহাবুল ইসলাম শিলু ও তার স্ত্রী মোসা. আসমা আফিয়া ওরফে অহনা ওরফে অধরা, মো. স্বাধীন, সাগর আলী, মেহেদী হাসান মিম ও মোসা. প্রিয়া আক্তার মায়া ওরফে টুসু।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- মো. ইকবালের (ছদ্মনাম) প্রায় ৪-৫ মাস পূর্বে অহনা নামের একটি মেয়ের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মোবাইলে ও ম্যাসেঞ্জারে তাদের কথা হতো। কিছু দিন পর অহনার সাথে ইকবালের নগরীর হাসপাতাল বন্ধ গেটে দেখা হয়। সেখানে অহনার বান্ধবী মায়ার সাথেও তার পরিচয় হয়। গত ২০ জুলাই অহনা তার বান্ধবী মায়ার মোবাইল ফোন থেকে ইকবালকে চন্দ্রিমা থানার শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দেখার করার জন্য আসতে বলে। ইকবাল সরল বিশ্বাসে রাত সাড়ে ৯ টায় শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসে। সেখানে অহনা ও তার বান্ধবী মায়ার সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে কথা বলার সময় আসামিরা হাতে লোহার রড, জিআই পাইপ, চাকু ইত্যাদি নিয়ে ইকবালকে ঘিরে ফেলে এবং জোরপূর্বক স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়।
সেখানে এলোপাথাড়ি চার-থাপ্পড়, কিলঘুসি মারে এবং চাকুর ভয় দেখিয়ে তার পকেটে থাকা নগদ ৩৭ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তার নগ্ন ছবি উঠিয়ে মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে বিকাশ, রকেট ও নগদের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। এছাড়াও মুক্তিপণ বাবদ আরও ৫ লক্ষ টাকার জন্য পরিবারের লোককে বলার জন্য চাপ দিলে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয় এবং আসামিরা নিজেরাই সে টাকা উঠিয়ে নেয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী ইকবাল ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে জানায়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আরেফিন জুয়েলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো. আশিক ইকবাল, এসআই মো. শাকিল হুদা জনি ও তার টিম আসামিদের নাম ঠিকানা ও অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান নির্ণয়পূর্বক গ্রেপ্তার করে। এসময় একজন পালিয়ে যায়। পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।